top of page

ল্যাটিন আমেরিকান বুম


ল্যাটিন আমেরিকান বুমের চার পুরোধা। বাম থেকেঃ মার্কেস, বোর্হেস, ফুয়েন্তেস, ইয়োসা

বিংশ শতকের ষাট ও সত্তর দশকে ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যে এক অভূতপূর্ব গতি আসে। ল্যাটিন আমেরিকার উপন্যাস, গল্প, কাব্য ও সমালোচনা প্রবন্ধ সারা বিশ্বকে অভিভূত করে এবং এ মহাদেশে থেকে শুরু হয় নতুন একটি সাহিত্য আন্দোলনের। এ আন্দোলনের ধ্যান ধারণা সবার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। হঠাৎ এই পট পরিবর্তনের সাথে তুলনা করা হয় বিস্ফোরণের। তাই এই সাহিত্য আন্দোলনের নাম হয় ল্যাটিন আমেরিকান বুম। ৬০ ও ৭০ এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ক্রান্তিকাল জন্ম দেয় মহামানবের। ল্যাটিন আমেরিকাও তার ক্রান্তিকালে জন্ম দেয় এমন কিছু মহামানবের যাঁরা সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করেছিলেন।


ষাট এবং সত্তরের দশকে ল্যাটিন আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল মূলত অন্তর্বর্তী গৃহযুদ্ধের কূটনৈতিক পরিবেশে প্রভাবিত। ১৯৫৯ সালে কিউবান বিপ্লব এবং একে প্রতিহত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বে অব পিগস ইনভেশন দিয়ে শুরু এক অস্থির সময়ের। দুর্বল কিউবা শক্তি বাড়াতে জোট বাঁধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে। ফলত সংকট আরো মূর্ত হয়ে ১৯৬২ সালে সংঘটিত হয় তের দিন ব্যাপী কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস বা অক্টোবর ক্রাইসিস এবং এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে।


ষাট ও সত্তরের দশক দুটি ছিল আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, চিলি, প্যারাগুয়ে এবং অন্যান্য অনেক দেশের জন্য বাস্তবিকই সামরিক শাসনের। ১৯৭৩ এ চিলির গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী এবং পুরো আশির দশক ক্ষমতা ছিল জেনারেল অগাস্তো পিনোচেতের হাতে। পিনোচেতের শাসনকালকে বলা হয় চিলির কদর্য, নিষ্ঠুর ও অমানবিক সময়। মানবাধিকারের চরম ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবিশ্বাস্য রকমের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সে সময়ে। একইভাবে সত্তরের দশকে আর্জেন্টিনাতে তথাকথিত ডারটি ওয়ারের সময় মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে, গুম হয়েছে সাধারণ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এইসব দেশের সরকারেরা একে অপরকে সাহায্য করেছে তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উৎখাত করতে, এমনকি তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত সরিয়ে ফেলতে। এই ঘৃণ্য মিশনের নামকরণ হয়েছিল অপারেশন কনডোর।


পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তর এর মধ্যবর্তী এই সময় বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্য এমনকি ইতিহাসকেও। মনস্তাত্বিক ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন ল্যাটিন আমেরিকান লেখকেরা, বদলে গিয়েছিল তাঁদের আত্মোপলব্ধি। তার প্রভাব পড়েছিল তাঁদের সেই সময়কালীন লেখাগুলোতে। সমসাময়িক নাগরিক জীবনযাত্রার আধুনিকায়ন, মধবিত্তের সংখ্যাবৃদ্ধি, কিউবান বিদ্রোহ, যুদ্ধমৈত্রী, গণযোগাযোগের ব্যাপকতা, ল্যাটিন আমেরিকার ব্যাপারে ইওরোপ ও আমেরিকার আকস্মিক মনোযোগ এ সব কিছুতেই প্রভাবিত হয়েছে তাঁদের সাহিত্য। বিশেষত প্রভাবশালী ঘটনা ছিল ’৫৯ এর কিউবান বিদ্রোহ এবং ’৭৩ এর চিলিয়ান ক্যু। আর্জেন্টিনায় জেনারেল পেরন এর পতন, গেরিলাদের সহিংস যুদ্ধ, কলম্বিয়াতে অন্তহীন সহিংস সংঘর্ষ এ সমস্তই ওতপ্রোত প্রভাবক ছিল ল্যাটিন আমেরিকান লেখকদের মানসিক ও প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে।


ল্যাটিন আমেরিকান বুম আন্দোলন বেশ কিছু উৎকর্ষমান লেখক উপহার দেওয়ার পাশাপাশি একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যধারাও এনে দেয়। ম্যাজিক রিয়েলিজম বা জাদুবাস্তবতা ধারা এই বুম আন্দোলনেরই ফসল। যদিও বুম আন্দোলনের আগেই জাদুবাস্তবতার সূত্রপাত, তবু পৃথিবীবাসী এই আন্দোলনের কারণেই ধারাটি সম্পর্কে জানতে পারেন। আর্জেন্টাইন কথাসাহিত্যিক হোর্হে লুই বোর্হেস (Jorge Luis Borges, ১৮৯৯ – ১৯৮৮) এর হিস্টোরিয়া ইউনিভার্সাল ডি লা ইনফেমিয়া-কে জাদুবাস্তবতা ধারার প্রথম উপন্যাস বলে গণ্য করা হয়। ১৯৩৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। কিউবান ঔপন্যাসিক আলেহো কার্পেন্তিয়ারকেও জাদুবাস্তবতার অন্যতম সূচনাকারীর মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড প্রকাশ এবং ১৯৭০ সালে এর ইংরেজী অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জাদুবাস্তবতা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে অবগত হন।


পরবর্তীতে পৃথিবীব্যাপী লেখকেরা এ ধারাকে গ্রহন করে তাঁদের রচনায় প্রয়োগ করেন। তাই বিংশ শতকের শেষ দশকগুলোকে সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার কাল বলা হয়। সালমান রুশদি, মিলান কুন্ডেরা, গুন্টার গ্রাস, এঞ্জেলা কার্টার, গ্রাহাম সুইফট প্রমুখ খ্যাতিমান সাহিত্যিকেরা এ ধারার উপন্যাস লিখে স্বীকৃতি পান।


The Oxford Companion to English Literature জাদুবাস্তবতা ধারাকে ব্যাখ্যা করেছে এভাবে,

জাদুবাস্তবতার উপন্যাস ও গল্পগুলোতে এমন এক শক্তিশালী বাচনভঙ্গি দেখা যায় যাতে দৃশ্যমান বাস্তব জগতের সাথে অনাকাঙ্খিত ও অবাস্তব ঘটনা অথবা স্বপ্ন, রূপকথা ও পৌরাণিক গল্পের উপাদানের সংমিশ্রণ দেখা যায়। বিচিত্র ও কারুকার্যময় এ কথনে প্রায়ই জাদুগল্পের আড়ালে কোন গূঢ় প্রতীক এবং পুনরাবৃত্তি থাকে।


তবে সাহিত্য অভিধান লেখক জে. এ. কাডন জাদুবাস্তবতার বৈশিষ্টকে আরও ব্যাপকভাবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন,

এ ধরণের কথাসাহিত্যের কয়েকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – বাস্তব ঘটনার সাথে খেয়ালী বা উদ্ভট ঘটনার মিশ্রণ এবং সহাবস্থান, কালিক ঘটনা পরম্পরা, পেঁচানো বা ক্ষেত্রবিশেষে ধাঁধা লাগানো বাচনভঙ্গি, স্বপ্ন-পুরাণ-রূপকথার নানাবিধ ব্যবহার, অভিব্যাক্তিবাদী বা অধিবাস্তববাদী বর্ণনা, গুপ্তবিদ্যা, বিস্ময় এবং আকস্মিক অভিঘাত, যা ভয়ঙ্কর এবং বর্ণনাতীত।


জাদুবাস্তবতা তাই জাদু ও বাস্তবতার দোলাচাল, যা জাদু ও বাস্তবতার সীমারেখা স্পষ্ট নির্দেশ করতে পারে না, কিন্তু তা সৃজন করতে গেলে প্রয়োজন পড়ে অসীম সৃষ্টিশীলতার।


ল্যাটিন আমেরিকান বুম আন্দোলনের সাথে অনেক লেখকের নাম এসে যায়, তবে পুরোধা হিসেবে ধরা হয় মূলত চার জনকে। হুলিও কোরতেজার, কার্লোস ফুয়েন্তেস, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, মারিও ভার্গাস ইয়োসা।


হুলিও কোরতেজার, চার বছর বয়স থেকে আরজেন্টিনার, বুয়েনোস এয়ারেসে বড় হয়েছেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে তার মন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তৎকালীন সরকারের বিপক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে হারান ইউনিভার্সিটি অব মেন্দোজার চাকরি, ক্রমে হন দেশছাড়া, নির্বাসিত। জীবনের বেশীরভাগ সময় এরপর তিনি কাটিয়েছেন ফ্রান্সে। সর্বসমক্ষে তিনি সমর্থন করতেন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কিউবান সরকারকে, একইভাবে আর্জেন্টিনার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে। এছাড়া নিকারাগুয়ায় সান্দিনিস্তাসের মত বামপন্থী আন্দোলনের সমর্থনেও পাওয়া যেত তাঁকে। ১৯৭৩ এ প্রকাশিত তাঁর পূর্ণ রাজনৈতিক উপন্যাস ছিল লিব্রো দে ম্যান্যুয়াল। এডগার অ্যালান ও বোরগেস প্রভাবিত এই লেখক সম্ভবত সমস্ত বুম লেখকদের মধ্যে সবেচেয়ে বেশী পরীক্ষামূলক ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ছিল ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হপস্কচ যা তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তোলে।


কার্লোস ফুয়েন্তেস মেক্সিকান কূটনৈতিকের সন্তান হওয়ার সুবাদে থেকেছেন অনেক শহরে, বুয়েনস এয়ারেস থেকে কুইতো, রিও ডি জেনিরো, এমনকি ওয়াশিংটনেও। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে মেক্সিকান বিরোধী মনোভাব ও পক্ষপাতদোষ তাঁকে আগ্রহী করে তোলে মেক্সিকান সংস্কৃতির প্রতি। আখ্যানধর্মী রচনা প্রক্রিয়ায় নতুন এবং উল্লেখযোগ্য একটি ধরণের সূচনা করেন তিনি তাঁর লা মুয়েরতে দে আরতেমিও ক্রুজ উপন্যাসে। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস ছিল মেক্সিকান এক বিপ্লবীর জীবনের গল্প। তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জটিল কাজটি হল ১৯৬৯ এ প্রকাশিত লা নুয়েভা নভেলা হিস্পেনো আমেরিকানা। ১৯৫৫ সালে এমানুয়েল কারবালোর সাথে যৌথভাবে তৈরি করেন জার্নাল রেভিস্তা মেক্সিকানা দে লিতারেচারা, উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপিয়ান মর্ডানিস্ট ও জাঁ পল সাঁত্রে এবং এলবার্ট ক্যামুস এর মত লেখকদের সাথে মেক্সিকানদের পরিচিত করা। কলম্বিয়া, হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন এ লেখক।


বুম লেখকদের মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হলেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু করে ধীরে ধীরে পরিচিত হন অনেক আলোচিত বিভিন্ন নন-ফিকশন ছোটগল্পের মাধ্যমে। তাঁর সর্বাধিক পরিচিত উপন্যাস ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড, নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল এবং অটাম অব দ্য প্যাট্রিয়ারক এবং পোস্ট-বুম প্রকাশ লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা। বিশ্বসাহিত্যে ম্যাজিকাল রিয়ালিজম বা যাদু-বাস্তবতাকে জনপ্রিয় করেন মার্কেস। বাস্তবতার উর্ধে অসম্ভাব্যকে নিয়ে গল্প বলেছেন তিনি, প্রকৃষ্ট উদাহরণ ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড। বিংশ শতকের অন্যতম সেরা সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচিত এই লেখক ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল পান। আজও মার্কেসকেই জাদুবাস্তবতার প্রধান পুরুষ এবং সফলতম প্রচেষ্টাকারী হিসেবে মানা হয়।


মারিও ভার্গাস ইয়োসা- পেরুভিয়ান-স্প্যানিশ এই লেখক ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, সাহিত্য ও রাজনৈতিক সমালোচনার জন্য বিখ্যাত। তিনি পরিচিত হন তাঁর দ্য টাইম অব দ্য হিরো উপন্যাসের মাধ্যমে ১৯৬৩ সালে। উপন্যাসটি ছিল পেরুভিয়ান মিলিটারির বর্বরতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সনির্বন্ধ প্রতিবেদন স্বরূপ। ২০১০ সালে এই লেখক সাহিত্যে নোবেল পান।


ল্যাটিন আমেরিকান বুম নিয়ে সমালোচনারও অভাব নেই। অনেকে মনে করেন বুম লেখকদের সম্ভ্রান্ত ও অভিজাতের দিকে ঝোঁক ছিল বেশী। সমালোচক মারিও বেনেদেত্তির দৃষ্টিতে গার্সিয়া মার্কেসের মত অন্যান্যরা, “represent a privileged class that had access to universal culture and were thus utterly unrepresentative of average people in Latin America.”


এছাড়া বুম লেখকদের রচনা ম্যাসকুলিনিটি বা পুরুষবাদীতায় বেশী গুরুত্ব দেওয়ার দোষে দুষ্ট, এমন অভিমত দিয়েছেন অনেকে। যদিও এইসব রচনার বেশীরভাগই ছিল ল্যাটিন আমেরিকান ইতিহাস নির্ভর এবং ফলত নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান সেইমত পরিগণিত হওয়াই স্বাভাবিক।

যতই সমালোচনা বা দোষ দেওয়া হোক না কেন, ল্যাটিন আমেরিকান বুম বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে উল্লেখ্য অধ্যায় বা মাইলফলক বলা যেতে পারে। বর্তমানে বিশ্বসাহিত্যে বিভিন্ন লেখক বা ঘটনার উদ্ধরণে প্রি বুম বা পোস্ট-বুম কথাটি উল্লেখ করা হয়। সাহিত্যের স্বাভাবিক রীতিবিরুদ্ধ কিন্তু ইতিবাচক এই বিকাশে বিশ্বসাহিত্য অনেক ধাপ এগিয়ে গেছে, অনেক দ্রুত। চারজন পুরোধাকে বাদ দিয়েও আরো অনেক লেখক এই বুম এর অংশ ছিলেন। তাঁদের সকলের পরিবর্তনধর্মী এই সাহিত্য আন্দোলন জন্ম দিয়েছে অনেক অবিস্মরণীয়। বোর্হেস, কার্পেন্তিয়ারের মাধ্যমে যে স্ফূলিঙ্গের জন্ম নেয়; ফুয়েন্তেস, মার্কেসরা তাকে রীতিমত দাবানলে পরিণত করেন।


লেখাটি পূর্বে অযান্ত্রিক অনলাইন সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, লিঙ্ক এখানে


Featured Writing
Tag Cloud
No tags yet.
bottom of page