top of page
Search

দ্রুতযান

  • tuhintalukder
  • Apr 14, 2015
  • 2 min read

গৌরীপুর শিলাগ্রাম রুটে একটা সুপার ফাস্ট ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে – দ্রুতযান এক্সপ্রেস। বাণিজ্যের বড় শহর দুটোর যোগাযোগ দ্রুত করার কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। আমাদের সময় যেখানে ছয়–সাত ঘন্টা সময় লাগত, এটা সেই দুরত্ব দুই ঘন্টাতেই পৌঁছে দেয়। আমার ছেলে কাল এই ট্রেনে চড়ে এল। সে তো মহাখুশি। আগে শিলাগ্রামে কোন কাজে যেতে হলে দিনে দিনে কাজ সেরে আসা যেত না। এখন পারা যাচ্ছে। তার সাথে কথা বললাম নতুন ট্রেন সার্ভিসটা নিয়ে।


ট্রেনটা বিদেশ থেকে আনা হয়েছে, উপমহাদেশে সবচেয়ে দ্রুতগামী, বিশ্বমানের সেবা, ঘটাং ঘটাং শব্দ নেই, ঝাঁকুনি নেই, সিগন্যালের অপেক্ষা নেই, যাত্রার ক্লান্তি নেই . . . . . আরও কত কিছু! ছেলে অবাক হয়, আমাদের সময় আমরা এটুকু পথের জন্য কিভাবে এত দীর্ঘযাত্রা সইতাম।


তাকে বললাম, পথে বিশ্রামপুর জংশনে লাইনের অপেক্ষায় আধঘন্টার জন্য ট্রেন থামত। আমরা নেমে বাতেনের বিখ্যাত চা খেতাম। আমার জীবনের সেরা চা–টা আমি তার কাছেই খেয়েছি। বাতেনের চা খেতে গিয়েই একদিন অরূপের সাথে পরিচয় হয়। পরে সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠে। এভাবে পরিচিতের গণ্ডিটাও বড় হত আমাদের।


ছেলে বলল, ‘দ্রুতযান বিশ্রামপুর স্টেশন পার হয় মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে।’


খেয়াল করলাম, নিতান্তই প্ল্যাটফর্ম দেখেছে বলে সে বিশ্রামপুরকে স্টেশনের মর্যাদা দিয়েছে, জংশনের মর্যাদা দিয়ে উঠতে পারে নি।


আমার এখনও মনে পড়ে, রূপদর্শন ব্রীজে আমাদের ট্রেনটা আস্তে আস্তে চলত। নিচের নদীটা কী অসম্ভব সুন্দরই না লাগত! নদীর রূপালী জলে সোনালী রোদের খেলা . . . . . সারস উড়ে যেত, কচুরিপানার ফুল ফুটত, শীতকালে অতিথি পাখিরা আসত। ছেলের দ্রুতযান কখন ব্রীজে ওঠে, কখন পার হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। ব্রীজটাকেও ট্রেনের জন্য নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।


ছেলের যুক্তি, সে চা খেতে আর কচুরিপানার ফুল দেখতে ট্রেনে চড়ে না। আগের ট্রেনে যাওয়া আসায় একদিন চলে যেত, এখন যায় চার ঘন্টা। অনেকটা সময় সাশ্রয়।


তাদের জীবনকে পিছনে ফেরানোর চেষ্টা নির্বুদ্ধিতা। সময় পরিবর্তন হবেই। কিন্তু নগরায়ন তাদের পুরো জীবনটাকেই দ্রুতযানের সওয়ার করে দিয়েছে। কোথাও থামার অবসর নেই, অকর্মণ্যের স্বস্তি নেই, কেউ কারও নিন্দা করার জন্যও দাঁড়ায় না, বিপদে পড়া মানুষকে টেনে তোলার ফুরসতও পায় না, কোথায় থামতে হবে তাও জানে না। দ্রুতযান শুধু সামনে এগিয়ে চলে। পৃথিবীর রূপ লাবণ্য সৌন্দর্য দেখার জন্যও সে দুদণ্ড থামে না।

Drutojan.jpg
 
 
 

Comments


Featured Writing
Tag Cloud

© 2015 by Tuhin Talukder.

bottom of page