top of page
Search

হ্যান্স এন্ডারসনের সেরা রূপকথা

  • tuhintalukder
  • Jun 19, 2014
  • 3 min read

আমাদের শৈশবের সম্পদ রূপকথাগুলো। কিন্তু রূপকথাগুলোর সীমারেখা শৈশবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ছোটবেলায় রূপকথাগুলো বিশ্বাস করে পড়তাম। বড়বেলায় সে ঘোর কাটলেও বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। আজও বিস্ময়ে ভাবি, কিভাবে রূপকথা লেখকেরা কল্পলোকের অমন মাত্রায় বিচরণ করতেন? হ্যান্স এন্ডারসনের গল্পগুলো ছেলেবেলা থেকে আমার কাছে ছিল ইউরোপের ঠাকুরমার ঝুলি। তাঁর গল্পগুলো ছেলেবেলায় একরকম আবেদন তৈরি করত। আজও ভিন্নরকম আবেদন এবং শৈশবের স্মৃতিচারণ সব নিয়ে হাজির হয় গল্পগুলো। সৈয়দ আমীরুল ইসলামের সম্পাদনায় ছয়টি গল্প নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনা হ্যান্স এন্ডারসনের সেরা রূপকথা।


বইটির প্রথম গল্প বুদ্ধদেব বসুর অনূদিত কুচ্ছিত প্যাঁকারু। হয়তোবা এন্ডারসনের সবচেয়ে বিখ্যাত রূপকথার গল্পও এটি। সব মানুষের মধ্যে অসম্পূর্ণতা থাকে, থাকে না পাওয়ার, না হওয়ার বেদনা। কিন্তু সবাই নিজের সে অসম্পূর্ণতার জন্য পৃথিবীর পথে বেরিয়ে পড়ে না। প্যাঁকারু নিজের পরিচিতের গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল। ক্রমে সেই যাত্রার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে একদিন নিজেকে সুদর্শন রাজহাঁস হিসেবে আবিষ্কার করে। অন্তরের বেদনাবোধ থেকে মানুষ যদি অনুসন্ধানে নামে তবে সে বড় হবেই। প্যাঁকারুর গল্পটি প্রতিভার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। যে কোন প্রতিভা নিজকালে এবং পরিচিতের সীমানায় নিগৃহিত, নির্যাতিত ও উপেক্ষিত হয়। কিন্তু কেউ যদি তাতে দমে না গিয়ে বৃহত্তর মননের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে, তাহলে একদিন নিজের সাফল্য বা সার্থকতায় নিজেই বিস্মিত হয়। আর চারপাশের সকলে তাকে শুভ্র পক্ষ বিস্তারকারী রাজহাঁস হিসেবে আবিষ্কার করে।


`রাজার নতুন পোশাক` গল্পটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। এক রাজাকে দুই জোচ্চোর এসে বলে তারা রাজার জন্য এমন এক পোশাক বানাবে যা কেবল বুদ্ধিমানেরা দেখবে, বোকারা দেখবে না। তারা রাজার কাছ থেকে প্রচুর টাকা পয়সাও নেয়। পোশাকটা কেউ দেখে না, এমনকি রাজাও না। কিন্তু বোকা প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে কেউ সে সত্য প্রকাশ করে না। পোশাক তৈরির পর রাজা মিছিল করে বেরোলে এক শিশু অমোঘ সত্যটি প্রকাশ করে। স্বেচ্ছাচারী রাজা ভাবেন, `মিছিল করে বেরিয়েছি যখন, যেতেই হবে মিছিলের সঙ্গে`। আর রাজার নগ্নমূর্তি (এবং নগ্ন ভাবমূর্তিও) প্রকাশ পায় সর্বসমক্ষে। গল্পটি কিছু সরকারী প্রজেক্টের কথাও মনে করিয়ে দেয়। কখন শুরু হয়, কখন শেষ জানি না। কিন্তু এর কোন প্রভাব দৈনন্দিন জীবন যাপনে টের পাওয়া যায় না।


`নববর্ষে মৃত কিশোরী` গল্পটি আমার ঠিক রূপকথা বলে মনে হয় নি। এক হতদরিদ্র কিশোরী নববর্ষ পালনের রাতে দিয়াশলাই বিক্রি করতে গিয়ে ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে আর ঘরে ফিরতে পারে না। এক কোণে বসে সে একটি দিয়াশলাই জ্বালে আর দেখে তার মৃত ঠাকুরমা তার সাথে নববর্ষ পালন করতে এসেছেন। সে দিয়াশলাইয়ের পর দিয়াশলাই জ্বালে আর দেখে ঠাকুরমা তার সাথে রাজকীয় জাঁকজমকে নববর্ষ অনুষ্ঠান করছেন। পরদিন সকালে ঐ জায়গায় মেয়েটির মৃতদেহ পাওয়া যায়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা আর শীতে মৃতপ্রায় মেয়েটির মৃত্যুর আগ−মুহূর্তে দৃষ্টিভ্রম হতেই পারে। প্রিয় মানুষ আর প্রিয় বিষয়গুলো চলে যাওয়ার আগে তার চিত্তকে নাড়া দিয়ে যেতেই পারে। তবে হ্যান্স এন্ডারসনের কৃতিত্ব এই করুণ গল্পটিকে শেষ পর্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ নববর্ষ পালনের গল্পে রূপান্তর করা। এটি একটি সার্থক ছোটগল্প হিসেবেও মূল্যায়ণ পাওয়ার মত। বিশ্বসাহিত্যে এমন ছোটগল্প অপ্রতুল।


`তুষার রাণী` গল্পটিতে একটি যাত্রার বর্ণনা আছে, যা ক্রমেই অভিযাত্রা হয়ে উঠেছে। ছোট্ট দুটি ছেলেমেয়ে খেলার সাথী ছিল। হঠাৎ একদিন দুষ্ট তুষার রাণী ছেলেটিকে ভুলিয়ে নিয়ে চলে যায়। মেয়েটি নানারকম বিপদ আপদ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ছেলেটিকে উদ্ধার করে আনে। কিন্তু এর প্রতীকগুলো বেশি মনোহারী। সেখানে এক দৈত্যের আয়নার কথা বলা আছে, যা সব ভালো জিনিসগুলোকে খারাপ করে দেখায়। তার সাথে বর্তমান পৃথিবীর গণমাধ্যম, টেলিভিশনের বেশ মিল আছে। যা কিছু ঘটে তা গণমাধ্যমের ভিতর দিয়ে যখন দেখি, তার অর্থই অন্য কিছু হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমও এই অসততার বাইরে নয়। তবে সব গণমাধ্যমকেই এক দৃষ্টিতে দেখা অবশ্যই বোকামি।


`জলকন্যার কাহিনী` পুরো পৃথিবীতে কিংবদন্তী হয়ে আছে। জলের রাজকুমারী প্রেমে পড়ে ডাঙার সুদর্শন রাজপুত্রের। তার সাথে বন্ধুত্বও করে সে। রাজপুত্রকে পেতে গিয়ে নিজের কথা বলার ক্ষমতা হারায় জলকুমারী। কিন্তু রাজপুত্র তো তাকে প্রেমের দৃষ্টিতে দেখে না। সেই রাজপুত্র যেদিন আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে, সেদিন জলকুমারীর আগের জীবনে ফেরৎ আসার একমাত্র উপায় ছিল নিজের প্রেমাষ্পদকে হত্যা করা। কিন্তু জলকুমারী নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে রাজকুমারকে প্রেয়সীর সাথে জীবন কাটাতে দেয়। বর্তমানের ভোগ লিপ্সায় আক্রান্ত পৃথিবীতে আত্মউৎসর্গের এই গল্পটি অনুপ্রেরণা হিসেবে নেওয়ার মত।


`মায়া তোরঙ` গল্পের প্রথমদিকে আমরা দেখি অমিতব্যয়িতার কারণে কপর্দকহীন হয়ে পড়ে সওদাগরপুত্র। কিন্তু জাদুর বাক্স পেয়ে উড়ে যায় অন্য দেশে। সেদেশের রাজকন্যার বিধিলিপিতে ছিল, প্রেমই তার জীবনের কাল হবে। তাই তাকে বন্দিনী করে রাখা হত। সওদাগর পুত্র জাদুর বাক্সে করে রাজকন্যার কাছে উড়ে গিয়ে তার হৃদয়ে প্রেমের শিখা জ্বালিয়ে দিয়ে আসে। পরে তার জীবনে সওদাগর পুত্রের আগমন, ছোট্ট ভুলে সর্বস্ব হারানো এবং আর রাজকন্যার সাথে মিলিত হতে না পারার গল্প শুনে মনে হয়, ঘরে বন্দী থেকে বিপদ হওয়া ঠেকানো যায় না।


বইটি শৈশবের ব্যাপারে স্মৃতিকাতর করে ফেলেছে আমাকে। গল্পগুলোকে বিশ্বাস করার সারল্য ফিরে পেতে ইচ্ছে করে।

হ্যান্স এন্ডারসনের সেরা রূপকথা.jpg
 
 
 

Opmerkingen


Featured Writing
Tag Cloud

© 2015 by Tuhin Talukder.

bottom of page