top of page
Search

জাগরণ

  • tuhintalukder
  • Jun 22, 2015
  • 2 min read

ঠিক পৌনে সাতটায় অ্যালার্ম বাজল। অফিসে দেরি না হওয়ার জন্য একটু ভোরেই অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিল সুগত। বিছানার পাশে জানালা। পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল বৃষ্টি হচ্ছে। অফিস তো দশটায়, আরেকটু পরে উঠলেও চলে। অ্যালার্ম স্নুয করে আবার ঘুমিয়ে পড়ল মুহূর্তের মধ্যে।


পনের মিনিট পর আবার অ্যালার্ম বেজে উঠল। সবাই পাঁচ মিনিটের স্নুয টাইম দেয়। সুগত দেয় পনের মিনিটের। এজন্যই অফিসে দেরি হয় তার। সময়মত কারও সাথে গিয়ে দেখা করে উঠতে পারে না। সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারে না বলেই অফিসের বস,সহপাঠী,বান্ধবী সবার তিরষ্কার শোনে। কিন্তু লালন বলে, স্বভাব না যায় ম’লে। কাল অফিসে পৌঁছতে মাত্র মিনিট বিশেক দেরি করেছিল বলে বস ফোন করে বসলেন। বললেন, ‘সবাই চলে এল আর আপনি এখনো আসতে পারলেন না?’ তখন সে অফিস বিল্ডিঙের ঠিক নিচে, রিক্সা থেকে নামছিল।


উঠে বসল সুগত। না, আজ দেরি হতে দেবে না। বিছানার এক পাশে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে। কিন্তু অ্যালার্ম স্নুয করতে ভুলল না। কিছুক্ষণ পর আবার একটুখানি নড়েচড়ে উঠল। ঘড়িতে সময় দেখল। বাইরে ঝমঝমে বৃষ্টি।


সোয়া সাতটায় যথারীতি অ্যালার্ম বাজলে বেশ বিরক্ত হল সে। শীত শীত লাগছে, কাঁথাটা টেনে ভালভাবে গায়ে জড়াল। ঘুম যেহেতু ভেঙেই গেছে তাই অ্যালার্মটা একেবারে বন্ধ করে দিল। দেয়াল থেকে মাথাটা কখন যে বালিশের উপর এনে ফেলল নিজেই জানে না।


ঘুম ভাঙল আটটা পঁয়ত্রিশে। ওরে সব্বোনাশ! এত প্রতিজ্ঞার পরও দেরি? না, এ জীবনে আর শোধরানো সম্ভব না তার পক্ষে। নয়টায় না বেরোলে কিছুতেই সময়মত পৌঁছতে পারবে না। দাঁত ব্রাশ করে, চা বানিয়ে খেতে খেতে পোশাক পড়ল। এদিকে বৃষ্টির বিরাম নেই। একটুক্ষণ থেমে দেখল। কিন্তু লাভ নেই দেখে মত বদলাল।


তারপরও ঠিক সময়েই বেরোল সুগত। এখনো গাড়ি পেলে অফিসে দেরি হবে না। কিন্তু রাস্তায় অসম্ভব জ্যাম। অত্যধিক বৃষ্টির ফলাফল। প্রথম যে গাড়িটা পেল তাতেই উঠল। জ্যামের কারণে ধীরে এগোতে হচ্ছে। সে ভাবল, অন্যদিন আলসেমী করে দেরি করে, আজ ঠিক সময়ে বেরিয়েও লাভ হল না। গাড়ি এগোতে এগোতে দেখল বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে গেছে। ভোর রাত থেকে ঝমঝমে বৃষ্টি হচ্ছিল। সে যখন হালকা শীতে আরাম করে ঘুমোচ্ছিল, তখন রাস্তার এই হাল হয়ে গেছে। বার বার ঘড়ি দেখল। নাহ, দশটার আগে অফিসে ঢুকতে পারবে বলে মনে হয় না। আরও এগোলে দেখল, অথৈ পানি। রিক্সা উলটে পড়ে যাত্রী হাবুডুবু খাচ্ছে। একটা বড় গাড়ি গেল আর তার ঢেউ গিয়ে ঢুকল ফুটপাতের পাশের দোকানে। অনেক গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে মাঝপথে থেমে গেছে।


ঘড়ি দেখল সুগত, নয়টা পঁয়তাল্লিশ। তার মনে হল, তাকে দেরি করানোর জন্যই বোধহয় ভাগ্যদেবতা এতবড় বৃষ্টি নামিয়েছে। নাহলে ঠিক আজই কেন? সে ফোন তুলে নিল। বসকে ফোন করে দেরির কারণ বলতে হবে। আবারও ভালমন্দ কথা শুনতে হবে। ফোন করে সুগত অবাক। বৃষ্টির কারণে বস নিজেই পথে ফেঁসে বসে আছেন। সে আগে আগে ফোন করায় তিনি খুব খুশি হলেন এবং ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘যখন পারেন তখন পৌঁছলেই চলবে।’


শেষ পর্যন্ত হাঁটু পানি মাড়িয়ে, কাপড়-চোপড় ভিজিয়ে, কখনো বাসে কখনো রিক্সায় চড়ে, বৃষ্টিতে যথেষ্ট নাজেহাল হয়ে দশটা বিশ মিনিটে সে অফিসে ঢুকতে পারল। দেখল অনেকেই আসতে পারে নি, হয়তো দেরি হবে তাদের। বস অফিসে আসলেন আরও মিনিট বিশেক পর।


আজ আর ভর্ৎসনা শুনতে হল না। ( ইংরেজী সংস্করণের লিঙ্ক )


 
 
 

Comments


Featured Writing
Tag Cloud

© 2015 by Tuhin Talukder.

bottom of page