top of page
Search

রবি ঠাকুরের ছোটগল্প – অসম্ভব কথা

  • tuhintalukder
  • Nov 15, 2015
  • 2 min read

আমি মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি, বাঁশি কই আগের মত বাজে না, মন আমার তেমন করে সাজে না, তবে কী ছেলেবেলা, অনেক দূরে ফেলে এসেছি?

এমন কে আছে যে, প্রতিমা ব্যানার্জীর গানটি শোনে নি? গানের বক্তব্য হচ্ছে, শৈশবের বিস্ময় বড় হয়ে হারিয়ে ফেলা। ছেলেবেলা অনেক দূরে ফেলে এসেছি – এটা অতটা কষ্টের নাও হতে পারত, যদি ছেলেবেলার বিস্মিত হওয়ার, আনন্দ পাওয়ার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে না যেত।


‘অসম্ভব কথা’ গল্পটিও এই সরল কথাটিই বলতে চায়। বৃষ্টির সন্ধ্যায় দুরন্ত শিশু পড়া ফাঁকি দিয়ে দিদিমাকে আব্দার করে – ‘গল্প বলো’। কী সেই গল্প, কত অভিনব তার কাহিনী শিশু তা মূল্যায়ণ করে না। রূপকথার অলীক জগতে সে হারাতে চায়। রূপকথার চরিত্রে নিজেকে খুঁজে পেতে চায়। শিশুর বিস্ময় রূপকথাকে সৌন্দর্য দেয়, তা না হলে রূপকথা অবাস্তব মিথ্যা ছাড়া তো আর কিছু নয়। ‘এক যে ছিল রাজা’ – বললে শিশু মেনে নেয়। কিন্তু যারা কোন রাজা, কোথাকার রাজা বলে বাস্তববাদী তর্ক জুড়ে দেয়, তারা গল্পের কী সাহিত্যের আনন্দটাই ছুঁতে পারে না। গল্পের নায়ক যখন হঠাৎ সাপের দংশনে মারা যায়, তখন শিশু প্রশ্ন করে – তার পরে? কারণ, প্রিয় চরিত্রের ট্র্যাজেডী তার পছন্দ নয়।


‘‘বালক তখন জানিত না, মৃত্যুর পরেও একটা 'তারপরে' থাকিতে পারে বটে, কিন্তু সে 'তার-পরে'র উত্তর কোনো দিদিমার দিদিমাও দিতে পারে না। . . . . . কাজেই দিদিমাকে সেই মহাপরিণামের চিররুদ্ধ গৃহ হইতে গল্পটিকে আবার ফিরাইয়া আনিতে হয়। . . . . . গল্প যখন ফুরাইয়া যায়, আরামে শ্রান্ত দুটি চক্ষু আপনি মুদিয়া আসে, তখনও তো শিশুর ক্ষুদ্র প্রাণটিকে একটি স্নিগ্ধ নিস্তব্ধ নিস্তরঙ্গ স্রোতের মধ্যে সুষুপ্তির ভেলায় করিয়া ভাসাইয়া দেওয়া হয়, তার পরে ভোরের বেলায় কে দুটি মায়ামন্ত্র পড়িয়া তাহাকে এই জগতের মধ্যে জাগ্রত করিয়া তোলে’।


‘অসম্ভব কথা’ গল্পটি হয়তো কোন গল্পই নয়, বরং গল্প কিভাবে শুনতে হবে সে সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিমত। গল্পে থাকে চরিত্র, থাকে চরিত্রগুলোকে নিয়ে ঘনিয়ে ওঠা কোন কাহিনী। কিন্তু অসম্ভব কথায় গল্পকার একবার শিশুটির গল্প শোনার ঘটনা বর্ণনা করছেন, আবার কিছুক্ষণ গল্প শুনে তার বিস্ময় বর্ণনা করছেন গল্পের আবহ থেকে বেরিয়ে এসে। সাথে প্রাবন্ধিকের মত করে তার্কিক, তাত্ত্বিকদের সমালোচনা করছেন।


রবীন্দ্রনাথ শিল্প সাহিত্যে কলাকৈবল্যবাদ – অর্থাৎ সৌন্দর্যের জন্য শিল্প – এই মতে বিশ্বাসী। সৌন্দর্যের প্রয়োজনে বাস্তবিকতার অনুশাসন লঙ্ঘনীয়। রূপকথার সার্থকতা শিশুকে আনন্দের পরশ বুলিয়ে ঘুমের জগতে নিয়ে যাওয়ায়। ‘‘কিন্তু যাহার বিশ্বাস নাই, যে ভীরু এ সৌন্দর্যরসাস্বাদনের জন্যও এক ইঞ্চি পরিমাণ অসম্ভবকে লঙ্ঘন করিতে পরাঙ্মুখ হয়, তাহার কাছে কোনো কিছুর আর 'তার পরে' নাই, সমস্তই হঠাৎ অসময়ে এক অসমাপ্তিতে সমাপ্ত হইয়া গেছে’। তারা ছেলেবেলা অনেক দূরে ফেলে এসেছে।


নভেম্বর ১৬, ২০১৫ তারিখে বইপোকা গ্রুপে প্রকাশিত, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫ তারিখে বইপোকাদের আড্ডাখানা গ্রুপে প্রকাশিত।

 
 
 

Comentários


Featured Writing
Tag Cloud

© 2015 by Tuhin Talukder.

bottom of page