top of page

সৈয়দ শামসুল হকের লেখালেখি

[ গত ১৩/১২/২০১৪ তারিখে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলোর ইশকুলের আলোচনা অনুষ্ঠানে নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে। তাঁর জীবনের শুরু থেকে অনেক কথাই তিনি বলেছিলেন। অনেক ঘটনা, যা তাঁকে ক্রমে লেখার পথে ধাবিত করেছিল। তাঁর সেই বক্তব্যের আলোকেই এই লেখাটি। ]


সৈয়দ শামসুল হক


অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানোর সময় উপস্থাপক সৈয়দ শামসুল হককে সুসাহিত্যিক বলে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই বলেন, ‘জীবনে কখনো কাউকে কুসাহিত্যিক হতে শুনলাম না। অনেকে বলেন, স্বনামখ্যাত। পরনামখ্যাত কেউ কি কখনো হতে পারে?’ এভাবে শুরু করার একটা কারণ ছিল। লেখালেখির একটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে তিনি বলতে চেয়েছিলেন, ‘বিশেষণ যত বর্জন করা যায়, ততই লেখা স্পষ্ট হয়’। বিশেষণ দিয়ে কোন বর্ণনাকে সংক্ষেপ না করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনাই কাঙ্খিত। যেমন, ‘অপরূপ মুহূর্ত’ বললে লেখকের মনের দৃশ্যটি পাঠক দেখতে পায় না। বরং কি কারণে দৃশ্যটি অপরূপ হল, তার সূক্ষ্ম বর্ণনাই দিতে হবে। সৈয়দ শামসুল হক তাঁর অগ্রজ এক লেখকের একটি ভ্রমণকাহিনীমূলক বইয়ের উদাহরণ দেন। তিনি সৈয়দ হকের চেয়ে বয়সে বড় হলেও লেখালেখিতে সবসময় তাঁর মতামত ও পরামর্শ নিতেন। ষাটের দশকে তিনি চীনের প্রাচীর দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পথের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাচীরে গিয়েই তিনি নাকি দেখেন – অপূর্ব দৃশ্য। এরপর আর কোন বিবরণ না দিয়ে পরের পরিচ্ছেদে চলে যান। সৈয়দ হক তাঁকে বলেন, ‘আপনি কী অপূর্ব দৃশ্য দেখলেন তা তো বললেন না। পাঠকের মনে তা কোন অপূর্ব দৃশ্য অঙ্কন করবে না।’


তিনি বলেন, লেখকের কাজ সংকেত পাঠানো। যে লেখক যত শক্তিশালী সংকেত পাঠাতে পারেন, পাঠকের মনে তা তত স্পষ্ট ছবি আঁকতে পারে। লেখকের বর্ণনা থেকে পাঠক নিজের মত করে চিত্রকল্প এঁকে নেন। সৈয়দ হক তাঁর মার্জিনে মন্তব্য বইতে লিখেছেন, ‘লেখায় আমরা কখনোই সবটা পুরোপুরি বলতে পারি না – সেটা অসম্ভব প্রস্তাব; আমরা কেবল যা পারি তা হচ্ছে লেখার ভেতর দিয়ে সংকেতের পর সংকেত তৈরি করতে পারি। এবং তা পাঠকের কাছে পাঠাই। পড়তে পড়তে একের পর এক সেইসব সংকেত পেয়ে পাঠকের মন সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠে – তার কল্পনা উত্তেজিত হতে থাকে, সে ছবি তৈরি করতে থাকে, কানে যেন সংলাপও শুনতে পায়। এই কাজটা যখন খুব ভালভাবে হয়ে যায়, তখনি গল্প উপন্যাসের চরিত্র আমাদের অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে যায় – ঠিক যেমন নিজেরই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা জানা শোনা মানুষেরা হয়।’


উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তিনি ছেলেবেলায় মদীনা শহর আর খেজুর গাছের বর্ণনা পড়েছিলেন। তখন শহর বলতে তাঁর মনে ফুটে ওঠে কুঁড়িগ্রামের ছবি, যেখানে তাঁর শৈশব কেটেছে। আর খেজুর গাছ বলতে ফুটে ওঠে মানিকগঞ্জে দেখা কোন খেজুর গাছের ছবি। তিনি লিখেছেন, ‘আমি একটা উদাহরণ প্রায়ই দিই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালি উপন্যাস। গ্রাম আছে, অপু আছে, দুর্গা আছে; মনে পড়বে অপুদের গ্রাম সীমান্তে রেললাইন, ট্রেনের হুইসিল। এখন একবার ভেবে দেখুন বিভূতিভূষণ যে-গ্রাম যে-অপু যে-মানুষ যে-রেললাইন তাঁর উপন্যাসে এনেছিলেন সে সকলই তিনি যে রকমটি দেখেছিলেন আমরা যখন উপন্যাসটি পড়ি আমরাও কি অবিকল সে সবই দেখি না দেখতে পাই? আমরা বরং দেখি আমাদেরই দেখা গ্রাম, আমাদেরই কল্পনায় গড়া অপু, আমাদেরই কল্পনার দুর্গা, আমাদেরই চোখে দেখা রেললাইন, ট্রেন, কানে শোনা হুইসিল। আমরা যে এ সকল আমাদেরই কল্পনা ও অভিজ্ঞতার জমিন থেকে উদ্ধার করে দেখে উঠি – কেন উঠি? কেন ওই চরিত্রগুলো, জায়গাগুলো আমাদের কাছে এত প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে? ওঠে, কারণ, বিভূতিভূষণ বড় নিপুণভাবে সংকেতের পর সংকেত পাঠাতে পেরেছেন বলেই।’


সৈয়দ শামসুল হক সংকেতের নিপুণতার ব্যাপারে পাবলো পিকাসোর একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। একবার নাকি পাবলো পিকাসো এক কবি বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন আর একটা ছবিতে কিছুক্ষণ পর পর তুলির আঁচড় দিচ্ছিলেন। বন্ধু জিজ্ঞেস করেন, ছবিটি আঁকা কখন শেষ হবে? পিকাসো বলেন, ‘একটি ছবি আঁকা কখনোই পুরোপুরি শেষ হয় না’। শিল্পের যেকোন মাধ্যমের জন্যই এটা সত্যি। একটা গল্প লেখাও কখনোই পুরোপুরি শেষ হয় না। গল্পটি একটা পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারলে, লেখক সেটা প্রকাশ করেন। তারপরও প্রতিনিয়ত লেখাটিকে গড়ার কাজ চলতে থাকে। সংকেতের নিপুণতার ব্যাপারে লেখক সংশয়ে ভোগেন। এই সংশয় তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যার সংশয় নেই, তার জীবন কাষ্ঠের জীবন। তার বর্ধন সম্ভাবনা নেই। সংশয় থেকে প্রশ্নের জন্ম।


বৈষ্ণবেরা জ্ঞান অর্জনের তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেন – সেবা, বিনাম এবং প্রশ্ন। সেবা মানে গ্রহণ, পাঠ বা অধ্যয়ন; বিনাম হল বিনম্রতা বা বিনয়; আর চারপাশের সব কিছু নিয়ে প্রশ্ন করার গুণটিও থাকতে হবে। প্রশ্ন প্রথমত গুরুকে করতে করতে হবে। গুরুর কাছে উত্তর পাওয়া না গেলে নিজেকেই উত্তরটি খুঁজে নিতে হবে। সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘প্রশ্ন করো, তোমার নিজের ভিতরেই উত্তরটা আছে’। তাঁর বিখ্যাত উক্তি – Know thyself. আমাদের প্রত্যেককে প্রশ্ন করতে হবে, আমি কে? আমার আসার উদ্দেশ্য কী? নিজের ভেতরে সমস্ত সময়কে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই লেখা যাবে। রবীন্দ্রনাথ তাই পাঠাগারকে বলেছেন – মহাকাল। পাঠাগার যেন অনাদি অনন্ত কালকে ধারণ করে আছে।


সৈয়দ শামসুল হক তাঁর পরিবারের ইতিহাসও কিছুটা বর্ণনা করেন। এতে আমরা জানতে পারি, জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তাঁকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর বাবা চিকিৎসক ছিলেন। তিনি কোলকাতায় চিকিৎসা করতেন। হঠাৎ একদিন তাঁর মাথায় ভাবনা আসে, আমি তো গাঁয়ের ছেলে। আমি এই বড় শহরে কেন? আমার তো এখানে থাকার কথা না। আমি এখানে কী করছি? ১৯২১ সালে সিদ্ধান্ত পালটে তিনি কুঁড়িগ্রামে ফেরত আসেন এবং সেখানেই চিকিৎসা শুরু করেন। বড় শহরের প্রতিপত্তির প্রলোভন ছেড়ে তিনি গাঁয়ের জীবনকে বেছে নেন। ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করে গেছেন।


এরপর তাঁদের পরিবারকে ছোটখাট অর্থনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেক ভাই বোনের মধ্যে সৈয়দ হক ছিলেন সবার বড়। সেসময় তিনি কুঁড়িগ্রামে বাড়িতে মোটামুটি অবসরেই দিন যাপন করছিলেন। তাঁর বাবার চেম্বার দেখাশোনা করতেন কর্মচারীরা। দিনশেষে তাঁরা টাকা পৌঁছে দিয়ে যেতেন। প্রতিদিন বিকেলে তিনি প্রতিবেশীর বাড়িতে যেতেন। সে বাড়ির কিশোরী কন্যা তাঁকে চা বানিয়ে এনে দিত। সে পরিবারের সাথে গল্প করতেন তিনি। তাঁর বর্ণনায়, ঐ কিশোরীর সাথে কোন তাঁর কোন অনুভবের সম্পর্ক ছিল না, ছিল কেবলই সৌহার্দ্য। বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেন। সন্ধ্যায় উঠানে বসে মায়ের সাথে আকাশের তারা দেখতে দেখতে সুখ দুঃখের কথা বলতেন। এভাবে পাঁচ মাস যাওয়ার পর একদিন তাঁর মাথায় এল সেই সুনিশ্চিত প্রশ্ন – আমি এখানে কেন?


তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তার দুমাস পর তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পায়। লেখক না বললেও আমরা অনুমান করতে পারি, ঐ পাঁচ মাসের অবসরে প্রথম বইটিকে রূপদানের প্রস্তুতি চলেছিল। সেদিন তিনি যদি ঐ প্রশ্নটি নিজেকে না করতেন, তাহলে হয়তো কুঁড়িগ্রামেই তাঁর জীবন অতিবাহিত হতে পারত। হয়ত, ঐ কিশোরী তাঁর জীবনসঙ্গিনী হতেন।


লেখকের অবিরাম নিজেকে তৈরি করতে হয়। সেটা থেকে নিজের স্বতন্ত্র একটি দেখার ভঙ্গিও গড়ে নিতে হয়। সৈয়দ হক চোখের দেখা আর দেখার চোখের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। চোখ দিয়ে যা দেখি, তাই চোখের দেখা অর্থাৎ কেবলই দেখা। কিন্তু দেখার চোখ সবার থাকে না। লেখকদের এই দেখার চোখটিই থাকতে হয়। এই দেখার চোখ দিয়েই তিনি সবাইকে দেখান, এভাবেও দেখা যায়।


লেখার ক্ষেত্রে লেখক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যে কোন অভিজ্ঞতাই ব্যবহার করতে পারেন। মীর মোশার্‌রফ হোসেন পরোক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বিষাদসিন্ধু লিখেছিলেন। আবার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক ভাল সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে।


লেখক একটি লেখা লেখেন কোন একটি সময়ের কথা ভেবে। কিন্তু সৃজনশীল পাঠক তাকে নিজের সময়ের মত করে বুঝে নেন। যেমন, বিষাদসিন্ধুতে আমরা ক্ষমতা ও নারীলোভীদের যে চিত্র দেখি, তার সাথে মিল পাই আজকের ক্ষমতা ও নারীলোভীদের। জীবনানন্দ যখন বলেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, একাত্তরের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধরত বাঙালির কাছে তার প্রেরণা অন্যরকম হয়ে দাঁড়ায়। আবার আজকের জন্যও কবিতাটির আবেদন অগ্রাহ্য করা যাবে না। কোন সাহিত্য হারিয়ে যায় সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক থাকে না বলে। বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি আজও প্রাসঙ্গিক।


সাহিত্য শব্দটি এসেছে ‘সহিত’ থেকে। যেখানে পাঠক নেই, সেখানে সাহিত্য নেই। যেখানে দর্শক নেই, সেটা নাটক নয়। নাট্যকারের রচিত পাণ্ডুলিপিটি নাটক নয়, যখন এর মহড়া চলে তখনও তা নাটক নয়। যখন তা দর্শকের সামনে পরিবেশিত হয় তখনই তা নাটক। দর্শক, পাঠক বা অনুরাগীর সক্রিয় অংশগ্রহণেই একটি প্রচেষ্টা শিল্প হয়ে ওঠে। জীবন্ত মানুষের সাথে জীবন্ত মানুষের যোগাযোগ – এই হচ্ছে সাহিত্য। পাঠক পড়ার সময় লেখক জীবন্ত হয়ে তাঁর সাথে থাকেন। সৈয়দ হক আশা প্রকাশ করেছেন, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সমাজে যে পরিবর্তন, তাতে সাহিত্য আরও বেশি অন্তর্মুখী হবে এবং পাঠক আরও বেশি সৃজনশীল হবেন।


উপস্থিত মানুষেরা আলোচনা শুনে সৈয়দ শামসুল হককে নানা প্রশ্ন করেন। সেখানে একটি বিষয় প্রাধান্য পায় – আগেকার মত বড় সাহিত্যিকেরা আজ আর জন্মাচ্ছেন না কেন? জবাবে তিনি স্মৃতিচারণা করে একটি ঘটনার বর্ণনা দেন। একবার পদ্মা নদীর উপর ফেরীতে যাচ্ছিলেন তিনি। একজন ভদ্রলোক তাঁকে লেখক হিসেবে শনাক্ত করতে পেরে এগিয়ে কথা বলতে আসেন। তিনি একটি গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার। তাঁর সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে লেখক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে কিচ্ছু করতে পারি নি। কিচ্ছু হয় নি’। তখন হেডমাস্টার ভদ্রলোক বলেন, ‘এই যে পদ্মা নদী, আমরা না দেখলেও এর নিচে পলি পড়েই যাচ্ছে, পড়েই যাচ্ছে . . . একদিন চর জেগে উঠবে’। বাংলাদেশেও সঙ্গোপনে পলি পড়ে যাচ্ছে। একদিন না একদিন চর জাগবেই।


সাতচল্লিশের দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পুরো বাঙালি সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন চালাতে শুরু করেছিল। কখনো আমাদের উপর ভাষা আরোপ করে, কখনো বাংলা লিপি বদলে ফেলতে চেয়ে, কখনো রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ করে তারা এদেশের সংস্কৃতিকে পঙ্গু করে ফেলতে চেয়েছিল। সে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ ছিল ভাষা আন্দোলন। পাশাপাশি পঞ্চাশের দশকের কবি সাহিত্যিকেরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এ অঞ্চলে বাংলা সাহিত্যকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। সৈয়দ শামসুল হক সে যুগেরই একজন পথ প্রদর্শক। তাঁদের ধারাবাহিকতায় ষাটের দশকের সাহিত্য আন্দোলন অনেক বড় বড় সাহিত্যিকের জন্ম দেয়। দুরাশার অথৈ জলে যাঁরা চর জাগানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন, সৈয়দ শামসুল হক তাঁদেরই একজন।

প্রথম খসড়াঃ ২৯/১২/২০১৪ মোহাম্মদপুর, ঢাকা। পরবর্তী খসড়াঃ ১৭/১২/২০১৫ শ্যামলী, ঢাকা।


[ লেখাটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রতিস্বর'এর শীত ১৪২২ সংখ্যায় প্রকাশিত। ]


Featured Writing
Tag Cloud
No tags yet.
bottom of page